রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

সম্ভাবনার শ্রমবাজার হাইকমিশনে বন্দি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১১১ সময় দর্শন

বাংলাদেশি কর্মীদের অনুকূলে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কর্মীর চাহিদাপত্র অনুমোদন দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর তথ্য হতাশাজনক। গত চার মাসে প্রায় ১ লাখ কর্মীর চাহিদাপত্র অনুমোদনের বিপরীতে গেছে মাত্র এক হাজার ১০০ জন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিরুদ্ধে বাছাইকৃত কর্মীদের চাহিদাপত্র সত্যায়নে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠেছে।

এতে বহুল আকাঙ্খিত ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রচেষ্টা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, মূলত হাইকমিশনের অদৃশ্য ফিতায় বন্দি হয়ে রয়েছে মালয়েশিয়ায় সম্ভাবনার শ্রমবাজার। কেননা, মালয়েশিয়া ইতিবাচক আগ্রহ দেখালেও হাইকমিশনের তরফে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। নেপালের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যেখানে মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় কর্মীর চাহিদাপত্রে সত্যায়ন করছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লাগছে দুই মাসেরও বেশি।

সূত্র জানিয়েছে, সময়মতো প্রয়োজনীয় কর্মী না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে খোদ মালয়েশিয় কোম্পানিগুলো। তারা দিনের পর দিন দেনদরবার করেও হাইকমিশনের সত্যায়ন নিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অনেক কোম্পানি বাংলাদেশ হাইকমিশনের অসহযোগিতার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে নালিশ করেছে। এতে বাংলাদেশের প্রতি দেশটির সরকারের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি শ্রমবাজারটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রায় ১ লাখ কর্মীর চাহিদাপত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত সত্যায়ন হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার। এদের মধ্যে ১৬ হাজার কর্মীর ভিসা হয়েছে; যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত এক হাজার ১০০ জন কর্মী মালয়েশিয়া পৌঁছতে পেরেছে। তবে ৪০ হাজার কর্মী এখনও সত্যায়নের জন্য অপেক্ষমান। বাকিরা এখনও আবেদন করেনি।

অন্যদিকে, সত্যায়ন মিললেও কর্মী পাঠাতে ধীরগতির প্রধান কারণ সিরিয়াল ইস্যু। সূত্র বলেছে, আবেদনের ক্রম অনুযায়ী ভিসা দিচ্ছে হাইকমিশন। সেক্ষেত্রে হাইকমিশন নিয়োগদাতা কম্পানির গুরুত্ব আমলে নিচ্ছে না। অর্থ্যাৎ, যেসব কোম্পানির কর্মী আগে দরকার, হাইকমিশনের ক্রম-জটিলতায় তারা পাচ্ছে দেরিতে। আবার অনেক কোম্পানি আগে কর্মী পাচ্ছে, যাদের এ মুহূর্তে না হলেও চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সেলেঙ্গরে অবস্থিত ‘কায়নান এসডিএন বিএইচডি’ নামক একটি কম্পানির জন্য ৯০০ বাংলাদেশি কর্মীর নিয়োগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করে রেখেছে। এমনকি তাদের মধ্যে ৭০০ কর্মী বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত। কিন্তু হাইকমিশনের ক্রম অনুযায়ী এসব কর্মীরা এখনই মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের জন্য ‘উপযুক্ত’ নয়। কোম্পানির প্রতিনিধি প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করেও হাইকমিশন থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে না। এতে ওই কোম্পানির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে কল ও খুদেবার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীর খায়রুল আলম উল্টো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দিকে আঙুল তুলছেন। কর্মী পাঠাতে অস্বাভাবিক ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় নিয়োগ অনুমতি দিয়েছে, আমরা দেই ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী আবেদন করছে না। আবেদনকারীর সংখ্যা কম। আমার মনে হয় কর্মী সিলেকশনে এজেন্সিগুলোর সমস্যা হচ্ছে। আবেদন না করলে ডিসপোজাল করার সুযোগ নেই। ’

ভিসা সত্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তো আমাদের হাতে নেই। আমার মনে হয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় ভূমিকা রাখতে পারে। ওনারা যেহেতু নিয়োগানুমতি দিয়ে শর্ত দেন, সেই শর্ত পূরণ হলে আমরা ছাড়পত্র দেই। আমার মনে হয় তাদের (মন্ত্রণালয়) দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত। মন্ত্রণালয় সিরিয়াস হলে এর উত্তরণ সম্ভব বলেও মত দেন এই কর্মকর্তা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব আব্দুল আওয়াল ‘নতুন যোগদান করেছেন’ মর্মে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে এ অনুবিভাগে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা উপসচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ার বলেন, ‘মালেশিয়ায় কর্মী কম যাওয়ার বিষয়ে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো ভালো জানবে। আমাদের কাছে আসা আবেদনের শর্তগুলো ঠিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেই। এখানে কোন কাজ পেন্ডিং নেই। দুতাবাস সত্যায়ন যা দিচ্ছে তা কোথাও আটকে থাকছে না। এজেন্সিগুলোর কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহ কম। ’ তার ভাষ্য, এসেন্সিগুলো অনেক ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এ কারণেও ধীরগতি আছে।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মী পাঠাচ্ছে, এমন একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি জানিয়েছে, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাফিলতির কারণে সম্ভাবনাময় বাজারটি হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর দুই দেশের সরকার পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগের ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খুলেছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। প্রবাসীকল্যাণ ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত কর্মী পাঠাতে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। অথচ হাইকমিশনের অবহেলায় সবকিছু ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।

তারা আরও বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বরাবরই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে নেপাল। সর্বশেষ চার মাসে নেপাল প্রায় ১ লাখ কর্মী পাঠিয়েছে মালয়েশিয়ায়। হাইকমিশনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা থাকলে বাংলাদেশ থেকেও প্রায় ১ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ ছিল।

জনশক্তি রপ্তানিকারকরা আরও জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে সে দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়ে থাকে। এরপর তারা কর্মীদের সত্যায়নের জন্য হাইকমিশনের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু হাইকমিশন পুনরায় কর্মীদের কাগজপত্র চায় এবং পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করে। অনেকে গত জুলাই মাসে আবেদন করে এখনও সত্যায়ন পায়নি।

জানা গেছে, চাহিদাপত্রে সত্যায়নের জন্য আবেদন পাওয়ার পর হাইকমিশনের তরফে কোনো কোনো কম্পানিতে একাধিকবার পরিদর্শনে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে। আবার অতি সামান্য সংখ্যক কর্মীর আবাসনের ব্যবস্থা উপযুক্ত নয় দাবি করে নিয়োগদাতা কম্পানিকে অপেক্ষায় রাখছে। এতে ওই কম্পানিগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি স্থবির। একমাত্র বড় বাজার সৌদি আরবেও জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। অন্যান্য দেশেও জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়া ধুঁকছে। সৌদির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ছিল মালয়েশিয়া। তবে অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। নানা কারণে গেল প্রায় ৪ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলছিল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি। অনেক প্রতীক্ষার পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এক মাসের মধ্যে কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও সিন্ডিকেট জটিলতা সামনে আসায় সে উদ্যোগ পিছিয়ে যায়।

সব শংকা কাটিয়ে গত ৯ আগস্ট ৫৩ জন কর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের দুয়ার আবার উন্মুক্ত হয়। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ক্ষণ গুণছিলেন সংশ্লিষ্টরা। চুক্তি অনুযায়ী, বছরে অন্তত ১ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু চার মাসে মাত্র ১ হাজার ১০০ কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বহুল কাঙ্খিত শ্রমবাজারটি ফের অনিশ্চয়তায় পড়লো।

এসব বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ের মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিমকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71